সিলেট

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের ঐতিহাসিক শহীদ মিনার ভেঙে স্মারক নির্মাণে তোলপাড়

প্রাক্তন–বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ, কাজ আপাতত বন্ধ

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৩৮

সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের প্রায় ৬০ বছর আগে নির্মিত ঐতিহাসিক শহীদ মিনার ভেঙে সেখানে নতুন একটি স্মারকস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করায় তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে। দীর্ঘদিন ধরে ভাষাশহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা নিবেদন, কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্র ছিল এই মিনার।

 

ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোলপাড় শুরু হয়। মঙ্গলবার কলেজ ছাত্রদলের পক্ষ থেকে অধ্যক্ষের কাছে শহীদ মিনার ভাঙার প্রতিবাদে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। আজ বুধবার একই দাবিতে মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

 

১৯৪৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজটি ১৯৮০ সালে সরকারীকরণ হয়। কলেজ প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২০ সালে আয়োজিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী উৎসবের স্মৃতি ধরে রাখতে ‘সুনাম ফলক’ নামের একটি স্মারক নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই প্রকল্পের আওতায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সম্প্রতি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু করে।

 

তবে ওই স্মারক নির্মাণের জন্য ১৯৬৬ সালে ভাষাশহীদদের স্মরণে নির্মিত এবং জেলায় প্রথম শহীদ মিনারটি ভেঙে ফেলা হলে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সাবেক শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘কলেজে এত জায়গা থাকতে কেন শহীদ মিনারের ভেতরেই স্মারক তৈরি হচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। এটি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে অসম্মান করার শামিল।’

 

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, ‘স্থান নির্ধারণ করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। আমরা মূল ফটকের পাশেই এটি করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম।’ তবে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ায় আপাতত কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

 

অন্যদিকে কলেজের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান প্রথমে বলেন, ‘এটি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত।’ তবে পরে স্বীকার করেন, ‘আমরাই জানিয়েছিলাম, শহীদ মিনারের স্থানে কাজ করা যেতে পারে। এখন অনেকে কথা বলছেন, তাই বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হবে।’

 

স্থানীয়রা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের হাতে পুনর্গঠিত এই শহীদ মিনার সুনামগঞ্জের ইতিহাস ও সংস্কৃতির প্রতীক। তারা অবিলম্বে শহীদ মিনার পুনর্নির্মাণ এবং স্মারক অন্যত্র স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছেন।

 

বার্তা সিলেট ডটকম / ইকবাল 

সিলেট থেকে আরো পড়ুন