মানবতাবিরোধী গুমের মামলায় ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫ ১১:৩৯
সংগ্রহীত
মানবতাবিরোধী গুমের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় হেফাজতে থাকা সেনা বাহিনীর ১৫ জন কর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে গঠিত তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালের আদেশে কারাগারে পাঠানো কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন— র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কে এম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (বর্তমানে অবসরকালীন ছুটিতে)।
এছাড়া র্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর মো. রাফাত-বিন-আলম, এবং ডিজিএফআইয়ের সাবেক তিন কর্মকর্তা মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী রয়েছেন।
এর আগে সকাল সোয়া ৭টার দিকে কড়া নিরাপত্তায় প্রিজনভ্যানে করে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে আনা হয়। পরে পুলিশ তাদের হাজতখানায় নিয়ে যায়।
গুমের অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২০ নভেম্বর এবং ২০২৪ সালের জুলাই মাসে রামপুরায় সংঘটিত গণহত্যার অভিযোগে করা মামলার শুনানির জন্য ৫ নভেম্বর তারিখ নির্ধারণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।জানা গেছে, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ মেয়াদি শাসনামলে টিএফআই-জেআইসি সেলে সংঘটিত গুম, খুন এবং জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সেনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়। এই তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ৩৪ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এর মধ্যে এক মামলায় ১৭ জন, অন্যটিতে ১৩ জন এবং বাকি একটিতে ৪ জনকে আসামি করা হয়। দুটি মামলায় সরাসরি শেখ হাসিনার নামও রয়েছে। মামলাগুলোর মোট ২৫ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ১৫ জন বর্তমানে হেফাজতে আছেন, বাকিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, এ মামলাগুলোর তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। দোষী প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর দণ্ডাদেশ হতে পারে।
তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে— তারা ২০১৩ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে টিএফআই-জেআইসি সেল ও র্যাবের বিভিন্ন ইউনিটে দায়িত্ব পালনকালে রাষ্ট্রবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত বেশ কয়েকজন নাগরিককে গুম ও নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করেন। এসব ঘটনার প্রমাণ হিসেবে ভুক্তভোগীদের স্বজন, প্রত্যক্ষদর্শী, এমনকি কিছু প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তা সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আইনি বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মামলাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নজিরবিহীন অধ্যায় খুলে দেবে। কারণ, প্রথমবারের মতো উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হতে যাচ্ছে। তারা মনে করছেন, এটি রাষ্ট্রীয় জবাবদিহিতার নতুন অধ্যায় হতে পারে, যদিও সমালোচকরা একে রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবেও দেখছেন।
অন্যদিকে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের পরিবার ও আইনজীবীরা দাবি করেছেন, এই মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তারা বলেন, “রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কর্মকর্তারা যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, তা এখন বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই মামলাগুলো দেশি-বিদেশি মহলে ব্যাপক আগ্রহের জন্ম দিয়েছে। আগামী ৫ ও ২০ নভেম্বরের শুনানিতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী মামলার পরবর্তী ধাপ নির্ধারিত হবে।
বার্তা সিলেট ডটকম / ইকবাল
আইন আদালত থেকে আরো পড়ুন
