নির্বাচনী সমঝোতায়,পর্দার আড়ালে মিশন সক্রিয়
এম এ বাছিত : গণভোট,জুলাই সনদ আর দুই কক্ষে পিআর নিয়ে পর্দার আড়ালে সক্রিয় তৎপরতা শুরু করেছে সরকারের দায়িত্ব প্রাপ্ত তিন উপদেষ্টা। ইতিমধ্যেই আশার আলো দেখা দিয়েছে। বিএনপি উচ্চ কক্ষে পিআর এবং তত্বাবধায়ক সরকারের পদ্ধতি ও জুলাই সনদের অধ্যাদেশ নিয়ে নমনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েছে। অপর দিকে, জামায়াতের তরফে নিম্ন কক্ষে পিআর এবং জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট প্রশ্নে ছাড় দিয়ে ভোটের দিনই গণভোট প্রশ্নে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছে। এনসিপি জাতীয় নির্বাচন আর গণভোট একই দিনে মেনে নিলেও জুলাই সনদ প্রশ্নে অনড় রয়েছে। ২-৩ দিনের ভেতর সমঝোতা নিশ্চিত করে সার্বিক বিষয়ে ঘোষণা দেবেন প্রধান উপদেষ্টা ড.ইউনুস। ওদিকে, যেকোনো পরিস্থিতি শান্ত থেকে মোকাবেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ,বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক সূত্র সমঝোতা নিয়ে আশার আলো দেখছে। পর্যবেক্ষক বিশ্লেষণে দেখা যায়,জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট হলে ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিশ্চিয়তা তৈরি হবে। গণভোটে বিশৃঙ্খলা হলে সেই অজুহাতে ফেব্রুয়ারির নির্বাচন কঠিন হয়ে যাবে। এতে ষড়যন্ত্রও যুক্ত হবে। এছাড়াও গণভোটের ফল বিপক্ষে গেলে পুরো সংস্কার বিফলে গিয়ে পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে উঠবে। এ ছাড়াও গণভোটে ভোটার উপস্থিতি চ্যালেঞ্জিং হওয়ায় এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হবে। আগে গণভোট করতে হলে চলতি নভেম্বরেই করতে হবে। এতো অল্প সময়ে সুষ্ঠু গণভোট আয়োজনে মোটেও প্রস্তুত নয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল নিয়েই তারা ব্যস্ত। একারণেই আগে গণভোটের আয়োজন হলে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচনকে সংশয়ে ফেলবে। এনিয়ে অধিকাংশ উপদেষ্টা ঐক্যমত পোষণ করেন। এছাড়াও জুলাই সনদের অধ্যাদেশ নিয়েও অধিকাংশ উপদেষ্টা তাদের মতামত ব্যাক্ত করেছেন। গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে। এসময় তিন উপদেষ্টাকে রাজনৈতিক দলের সাথে যোগাযোগের দায়িত্ব দেয়া হয়। ইতিমধ্যেই উপদেষ্টারা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ এবং জামায়াতের নায়েবে আমীর ড.আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের সাথে কথা বলেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে,অল্প সময়ের ব্যবধানে জাতীয় পর্যায়ের দুটি নির্বাচন করার সক্ষমতা ইসির নেই। গণভোটে সংসদ নির্বাচনের মতোই ভোটকেন্দ্র, কর্মকর্তা, ব্যালট পেপার, কালি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ যাবতীয় আয়োজন করতে হবে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। প্রয়োজনে এই অর্থ বাড়তে পারে। অর্থাৎ প্রায় ৩ হাজার কোটি খরচ হবে। দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে দুটো ভোটে ৬ হাজার কোটি খরচ রাষ্ট্রের জন্য বড় বোঝা হবে। তা ছাড়া ‘হ্যাঁ-না’ ভোটে কোনো কারণে না ভোট বেশি পড়লে পুরো রাষ্ট্রসংস্কার বিঘ্নিত হবে। এতে দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সংঘাত ছড়িয়ে পড়বে। এই সংঘাত থেকে গৃহযুদ্ধের দিকে রূপ নেয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে ভেস্তে যেতে পারে জুলাই সনদ। দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বাস্তবতায় আলাদা দিনে গণভোট করার যুক্তি খুঁজে পান না রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক বলেন, আলাদা দিনে গণভোট করা ঠিক হবে না। সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট হওয়া উচিত। বিশ্লেষকদের মতে,জাতীয় নির্বাচন যেভাবে উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে,গণভোট হলে সেই আগ্রহ না-ও থাকতে পারে। এক মাসের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের কাছে গণভোটের বিষয়বস্তু তুলে ধরা সম্ভব হবে ন। বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি যেহেতু সংসদ নির্বাচনের আগে গণভোটের বিপক্ষে,তাই তাদের কর্মীরা আগ্রহ হারাবেন সেটা স্পষ্ট। এ অবস্থায় কোনো কারণে গণভোট বিতর্কিত হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তখন তত্ত্বাবধায়ক বা ভিন্ন ফরম্যাটে নতুন সরকার গঠনের দাবি ওঠার সম্ভবনা তৈরি হবে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলীর বলেন,পরপর দুটো জাতীয় নির্বাচন করলে সংসদ নির্বাচনের যে বাজেট তার দ্বিগুণ করতে হবে। একই দিনে করলে জাতীয় নির্বাচনের জন্য যে বাজেট তার থেকে ১০-২০ শতাংশ বাড়ালেই গণভোট করা সম্ভব। জেসমিন টুলী বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই গণভোটেও সব কেন্দ্র থাকবে, সব পোলিং কর্মকর্তাকে রাখতে হবে, ব্যালট প্রিন্ট করতে হবে, মানে নির্বাচনী সব সরাঞ্জম লাগবে। নভেম্বরে গণভোট করতে হলে নির্বাচনী সামগ্রীগুলো তো কেনাকাটা করতে হবে। এখন কী ইসির হাতে সেই সময় আছে, প্রশ্ন রাখেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো কারণে নভেম্বরে গণভোটের ঘোষণা হলে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংঘাতময় হয়ে উঠবে। এমনিতেই দেশে অর্থনীতিতে স্থবিরতা চলছে। এমন অবস্থায় নতুন করে অস্থিতি খারাপ হলে অর্থনীতি ভেঙে পড়বে। ভেঙে পড়তে পারে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। মাথাছাড়া দিয়ে উঠবে দেশী ও বিদেশেী ষড়যন্ত্রের মিশন।
রাজনীতি থেকে আরো পড়ুন
