মতামত

ঈর্ষা করো কেন

প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২২ ০২:২১

সিনেমায় নায়িকার নাচ দেখলেই বিরক্ত লাগে। ভাবি, আমি দেখতেও তো কোনো নায়িকার চেয়ে কম সুন্দর ছিলাম না। কত লোক আমাকে দেখলে হাঁ করে তাকিয়ে থাকত। কিন্তু এমন তো করিনি।

এদিকে পাশের বাসার ১৯ বছর বয়সী পৃথা কোনো কারণ ছাড়াই আমাকে ‘আন্টি’ বলে ডাকে। আমি কি আন্টির বয়সী? আমাকে দেখলেই এসে সেলফি তুলতে চায়। সে নাকি মেকআপ ছাড়াই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি দেয়। আজকাল কত জাতের মেকআপ পাওয়া যায়, খালি চোখে বোঝাই যায় না। সে নিশ্চয়ই সেসব ব্যবহার করে। না হলে তার স্কিন অত ঝকঝক করবে কেন?

আরেক দল আছে বিবাহিতা সমিতি। খালি নিজের বরের বন্দনা করে। আমার বর কম কীসে? কিন্তু আমি তো এমন করি না। পরিবারের বড় ব্যবসা আছে তাই পড়াশোনা বাদ দিয়ে ব্যবসায় নেমে গেছে। আর ভার্সিটি পাস স্বামী দিয়ে আমি কী করব? কিন্তু মানুষ সেসব নিয়েও কত বড়াই করে।

সেদিন আমার এক বান্ধবী বলল, তার স্বামী পিএইচডি করতে ইংল্যান্ড যাবে, সঙ্গে সেও যাবে। কোনো খরচ লাগবে না, সব নাকি বরের স্কলারশিপ কভার করবে। আসলে সে আমাকে তার স্বামীর পিএইচডির সংবাদ দিতে ফোন করেনি, ফোন করেছে আমাকে এটা বুঝিয়ে দিতে যে, শিক্ষিত ছেলে বিয়ে করলে এমনিতেই দুনিয়ার কত জায়গা ঘোরা যায়।

 

ইংল্যান্ড আর এমন কী দূর! বরকে নিয়ে পরের সপ্তাহেই লন্ডন গিয়ে অনেক শপিং করলাম, ফেসবুকে ছবি দিলাম। ওই বান্ধবী দেখে লাইক দিলেও মন্তব্যে বলল—লন্ডন ঘুরে শপিং করার কপাল তো আর আমাদের হবে না। আমরা তো থাকব ভার্সিটি এলাকায়। মানে আমাকে কিন্তু একটা খোঁচা দিল। বোঝাতে চাইল, ইংল্যান্ডের কোনো একটা গ্রামে তার স্বামীর ভার্সিটির এলাকা লন্ডন থেকে উন্নত। শুধু শিক্ষিত স্বামী থাকলেই সেখানে যাওয়া যায়। আগে জানলে না হয় সেখানে গিয়ে ছবি তুলে আসতাম। কিন্তু হিংসার কারণে সে আগে সেটা বলেনি, তা হলে তো আর তার স্বামীর বিশেষত্ব থাকে না।

শুধু বাইরের লোক না। নিজেদের লোকও কিন্তু নিজেকে বিশেষ হিসেবে দেখাতে চায়। গতকাল আমার ছোট বোন তার বরকে নিয়ে আমার বাড়িতে হাজির। সঙ্গে দেখি ওর দুই বছর বয়সী সন্তান নেই। জিজ্ঞেস করায় হেসে উত্তর দিল—তার শাশুড়ি নাকি তাকে কয়েক দিন ছুটি দিয়ে বলেছেন, যাও নিজের মতো করে কয়দিন ঘুরে এসো।

আসলে সে আমাকে খোঁচা দিতে এসেছে। বোঝাতে এসেছে আমার শাশুড়ি থেকে তার শাশুড়ি কত ভালো। তার শাশুড়ি তাকে স্বাধীনতা দেন, কিন্তু আমি যেখানেই যাই পেছনে মা মা করতে করতে ছয় বছরের মেয়েটাও ঘুরঘুর করে।

আরেক দল আছে ফেসবুকে খালি কীসব লেখে আর অনেক লাইক-মন্তব্য পায়। আসলে এসব একেকটা সিন্ডিকেট। নিজেরাই নিজেদের পিঠ চুলকায়। এ ছাড়া একেকজনের ১০-১২ টা করে অ্যাকাউন্ট। নিজেই নিজের লেখাতে অন্য অ্যাকাউন্ট থেকে লাইক-মন্তব্য করে সেলিব্রেটি সাজে।

কিন্তু আমি কিছু লিখলে কোনো লাইক-মন্তব্য নেই। কেউ কেউ আবার দরদি সেজে ইনবক্সে জানায়, আমাকে নাকি আরেকটু পড়াশোনা করে-আরেকটু গুছিয়ে লিখতে হবে। আসলে ওরা চায় না আমি লিখি। লিখলে ওদের বাজার কমে যাবে।

আরেক দল আছে ফটো সেলিব্রেটি। নিজেরা নিজেদের ছবিতে লাইক দিয়ে ভরিয়ে ফেলবে। কিন্তু আমি ছবি দিলে মন্তব্যে লিখবে—এডিটেড ছবি। তারপর একটা হা হা দিয়ে চলে যাবে।

বুঝি না, কোনো দিন কাউকে আমি হিংসা না করলেও সবাই আমাকে অত হিংসা করে কেন?

মতামত থেকে আরো পড়ুন