জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ নিয়ে,রাজনৈতিক দলগুলোর মুখে এক,ভেতরে আরেক
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৫ ০২:০৭
রাজনৈতিক দলগুলো সনদ বাস্তবায়ন আদেশ মেনে নিয়েছে।
বার্তা সিলেট ডেস্ক : জুলাই জাতীয় সনদ ও গণভোট নিয়ে বিএনপি মুখে স্বাগত জানালেও দলটি ভেতরে ভেতরে নাখোশ। জামায়াতে ইসলামী এবং এনসিপি প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানালেও তারা সন্তুষ্ট। সনদ বাস্তবায়ন আদেশ তারা মেনে নিয়েছে। কোনো দলই আদেশ-গণভোট প্রত্যাখ্যান করেনি। গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনের পর সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। এটি জাতির উদ্দেশে ভাষণে তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আদেশ অনুযায়ী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন এবং গণভোট হবে। এটিই ছিল বিএনপির প্রধান দাবি। এ দাবি পূরণ হওয়ায় নোট অব ডিসেন্ট না থাকা নিয়ে বিরোধিতা করতে পারছে না। দলটি আদেশ জারি এবং আগামী সংসদের এমপিদের নিয়ে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনেরও বিপক্ষে ছিল। সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আটকে যেতে পারে আশঙ্কায় আদেশ জারি এবং পরিষদ গঠনের বিধানের বিরোধিতা না করে প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপির স্থায়ী কমিটি । জামায়াতের প্রধান দাবি ছিল, নির্বাচনের আগে গণভোট। এটি পূরণ না হওয়ায় দলটি সমমনাদের নিয়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ জানাচ্ছে। কিন্তু বিএনপির নোট ডিসেন্ট উপেক্ষা করে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ,সনদে বর্ণিত উপায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন এবং প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা খর্ব করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের মতো সংস্কার প্রস্তাব গণভোটে দেয়ায় জামায়াতের মূল উদ্দেশ্য পূরণ হয়েছে। এতে সন্তুষ্ট বলে জানিয়েছে জামায়াত সূত্র। সমমনা আট দলের মূল্যায়ন, বিএনপির তুলনায় তাদের দাবি বেশি পূরণ হয়েছে। না ভোটের প্রচার চালালে বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী হিসেবে ভোটের মাঠে তুলে ধরে নির্বাচনে সুবিধা আদায় করা যাবে। আবার বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হলেও গণভোটে অনুমোদিত সংস্কার প্রস্তাব উপেক্ষা করতে পারবে না। এনসিপি আওয়ামী লীগ মনোনীত রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে আদেশ জারির বিরুদ্ধে ছিল। তাদের দাবি ছিল,অন্তর্বর্তী সরকারকে গণঅভ্যুত্থানের ক্ষমতা বলে আদেশ জারি করতে হবে। এ দাবি পূরণ না হওয়ায় প্রকাশ্যে ক্ষোভ দেখালেও আদেশে সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের বিধান থাকায় এনসিপিও সন্তুষ্ট। পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ, সনদে বর্ণিত উপায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাব গণভোটে যাওয়ায় এ দলটি ভেতরে ভেতরে উচ্ছ্বসিত । সংবিধান সংস্কার করতে ৪৮ সংস্কার প্রস্তাব যাচ্ছে গণভোটে। এর মধ্যে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন,তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠন পদ্ধতি,সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি), ন্যায়পাল,মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক এবং দুদকে সাংবিধানিক কমিটির মাধ্যমে নিয়োগসহ ১৫ সংস্কার প্রস্তাবে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। দলটির দাবিতে তা সনদে যুক্ত করা হয়। বিএনপি অবস্থান ছিল, যে দল যে বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে,ক্ষমতায় গেলে সেভাবে সংস্কার করতে পারবে। গণভোটে হ্যাঁ জয়ী হলে উচ্চকক্ষে পিআর, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগসংক্রান্ত আট সংস্কার প্রস্তাব সনদ অনুযায়ী বাস্তবায়নের বাধ্যবাধকতা মূলক থাকবে। বিএনপি গণভোটেরও বিপক্ষে ছিল শুরু থেকেই। কিন্তু ঐকমত্য কমিশনের সংলাপে বিএনপিকে প্রতিনিধিত্ব করা নেতারা দলীয় ফোরামে আলোচনা ছাড়াই গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রথমবারের মতো গণভোট মেনে নেন। বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, এ কারণেই পরের বিষয়গুলোও মানতে হয়েছে। এসব জামায়াতের অনুকূলে গেছে। গণভোটে হ্যাঁ জয়ী হলে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট থাকা আট এবং ঐকমত্য হওয়া ৩০ সংস্কার প্রস্তাব আগামী সংসদ বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে বলে বিধান রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী আন্দোলনসহ আট দল গতকালও দাবি জানিয়েছে, নির্বাচনের আগে গণভোট করতে হবে। এ নিয়ে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। অভিযোগ করেছে, বিএনপিকে খুশি করতে সরকার ১০টি সংস্কার প্রস্তাব গণভোটের পরও নোট অব ডিসেন্ট অনুযায়ী বাস্তবায়নের সুযোগ রেখেছে। তার পরও জামায়াতসহ আট দল আদেশকে গ্রহণ করছে। নির্বাচনের পরিবেশের স্বার্থে জামায়াত আদেশকে গ্রহণ করছে। আদেশ জারির মাধ্যমে সনদের আইনি ভিত্তি নিশ্চিত হয়েছে। ফলে অসন্তোষ থাকলেও জামায়াত তা মেনে নিচ্ছে। গণভোট যখনই হোক পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন,সনদ অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিশ্চয়তা আদেশে থাকায় তারা সন্তুষ্ট। বিএনপির বিরোধিতার পরও সরকার আদেশ জারি করেছে,তা স্বস্তির। গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারে নোট অব ডিসেন্ট না রাখা এবং সাংবিধানিক আদেশ জারি জামায়াতের জন্য বড় বিজয়। এদিকে,রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে আদেশ জারিতে রাগ দেখালেও,সনদের আইনি ভিত্তিতে এনসিপিও খুশি। গতকাল সংবাদ সম্মেলনে দলটির মুখ্য সমন্বয়কারী নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, সরকার আদেশে বিএনপি এবং জামায়াতকে ভাগ দিয়েছে। জনগণকে কিছু দেয়নি। আর রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে সই করিয়ে আদেশকে অপবিত্র করেছে। তবে সংলাপে এনসিপির প্রতিনিধিত্ব করা দুই নেতা বলেছেন,আদেশ অনুযায়ী আগামী সংসদের এমপিদের নিয়ে কন্সটিটুয়েন্ট ক্ষমতাসম্পন্ন সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠিত হবে। এটি এনসিপির প্রধান দাবি ছিল। এই দাবি পূরণের মাধ্যমে এনসিপির বিজয় হয়েছে। উচ্চকক্ষে পিআর, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবে থাকা বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট উপেক্ষা করে এগুলো গণভোটে দেয়ায় এনসিপির জন্য জয়।
রাজনীতি থেকে আরো পড়ুন