সিলেট

মৌলভীবাজার

মনু নদীর নাব্যতা সংকটে কৃষি ও মৎস্য খাত হুমকিতে

প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫ ১৩:৪৮

সংগ্রহীত

হাওর, বাওড়, খাল, বিল ও নদীসমৃদ্ধ মৌলভীবাজার জেলার জলাশয়গুলো পলি ভরাটের কারণে দ্রুত নাব্যতা হারাচ্ছে। জেলার প্রধান নদী মনু দীর্ঘদিন ধরে খনন না হওয়ায় এর তলদেশ ভরাট হয়ে পড়েছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে বন্যা, বাঁধ ভাঙন, কৃষি জমির ক্ষতি এবং দেশীয় মাছের উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে।

 

উজানের ভারত থেকে প্রবাহিত মনু নদী মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার শরীফপুর এলাকা দিয়ে দেশে প্রবেশ করে প্রায় ৭৪ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মনুমুখ এলাকায় কুশিয়ারা নদীতে মিশেছে। ২০২২ ও ২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যায় এই নদীতে বিপুল পরিমাণ পলি জমে গভীরতা কমে যায়। ফলে নদীর তলদেশে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য চর।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুলাউড়ার পৃথিমপাশা, হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের ধলিয়া, সুখনাভী, রাজাপুর, কটারকোনা, ইসমাইলপুর, রনচাপ ও নিশ্চিন্তপুর এলাকায় জেগে উঠেছে বিশাল চর। এসব চরের কারণে গত বর্ষায় বাঁধের শিকরিয়া এলাকায় প্রায় ৩০০ ফুট ভাঙন দেখা দেয়। ২০২২ ও ২০২৪ সালের বন্যায় মিয়ারপাড়া, সন্দ্রাবাজ ও শালন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হন স্থানীয়রা।

 

কৃষক তানভীর আহমদ, তাজু মিয়া, মোবারক আলী, ইসমাইল আলী, আব্বাস আলী ও ফরিদ আহমদ জানান, “দীর্ঘদিন নদী খনন না করায় বর্ষায় পানি বৃদ্ধি পেলে ফসলি জমি তলিয়ে যায়। আগে এই নদীতে প্রচুর দেশীয় মাছ পাওয়া যেত, এখন পলি জমে নদীর গভীরতা কমে যাওয়ায় মাছও কমে গেছে।”

 

মনু নদীর রাজাপুর খেয়াঘাটের মাঝি রুবেল আলী ও ধলিয়া ঘাটের মাঝি হারুন মিয়া বলেন, “নদীতে এখন আর আগের মতো পানি নেই। শুকনো মৌসুমে নৌকা চলে না, মানুষ বাঁশের সাঁকো বা পায়ে হেঁটে নদী পার হয়। বর্ষায় আবার পানি উথলে বাঁধের ওপর দিয়ে চলে যায়।”

 

কুলাউড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু মাসুদ বলেন, “পলি জমার কারণে মনু, ফানাই নদী ও হাকালুকি হাওরের বিলগুলো পানি ধারণক্ষমতা হারাচ্ছে। এতে দেশীয় মাছের উৎপাদনও কমেছে। মনু নদী ও ফানাই নদীর পাশাপাশি কাংলী বিল খননের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।”

 

মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ বিন ওয়ালিদ জানান, “নদীর কিছু স্থানে আগের পলি অপসারণ করা হলেও সাম্প্রতিক বন্যার পর নতুন করে চর জেগেছে। এগুলো অপসারণ ও নদী খননের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব পাঠানো হবে।”

 

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন বলেন, “স্থানীয়রা পলি অপসারণ, বাঁধ মেরামত ও নদী খননের জন্য আবেদন করেছেন। মনু নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিংয়ের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”

 

স্থানীয়দের দাবি, মনু নদী দ্রুত খনন না করলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ বন্যা, ভূমি ক্ষয় ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি অনিবার্য হয়ে উঠবে।

 

বার্তা সিলেট ডটকম / ইকবাল 

সিলেট থেকে আরো পড়ুন